বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতন্ত্র না থাকলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সীমিত হতে পারে-এমন মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র নিয়ে সুনির্দিষ্ট পথরেখা না দেওয়ায় জো বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ নেই। তার আশা-আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হবে। আর তা না হলে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করতে থাকবে। এছাড়া টেকসই সংস্কার হলে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠতে পারে বলেও জানান তিনি।

বুধবার ডেরেক শোলের ঢাকা সফরের শেষ আয়োজন ছিল গণমাধ্যমের কয়েকজন সম্পাদকের সঙ্গে মতবিনিময়। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। মতবিনিময়কালে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণ তুলে ধরেন ডেরেক শোলে। বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ঢাকাকে গুরুত্ব দিচ্ছে ওয়াশিংটন।

বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠলে মার্কিন এই শীর্ষ কূটনীতিক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী নির্বাচন ভালো হবে। আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ সময় বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতন্ত্রচর্চার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তা না হলে সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অ্যান্টনি ব্লিংকেনের এই উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন টানাপোড়েনে বাংলাদেশকে কোনো পক্ষ নেওয়ার কথা বলবে না যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে তুরস্কের ভূমিকম্পসহ বিশ্বব্যাপী নানা মানবিক সংকট থাকলেও রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি তাদের গুরুত্ব কমবে না বলেও মন্তব্য করেন ডেরেক শোলে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ মিয়ানমারে নিহিত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ‘খুব ভালো’ বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের উপদেষ্টা ডেরেক শোলে। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে গুরুত্ব দেয়, সে কারণেই আমরা আজ এখানে। রাজনৈতিকভাবে, নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে আমাদের দুদেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের ওপর আমরা কতটা গুরুত্ব দিই, এই সফর তারই প্রতীক। যৌথ ব্রিফিংয়ে ডেরেক শোলে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। দুদেশের এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আশাবাদী। এটা ৫১ বছরের শক্তিশালী অংশীদারত্ব এবং আগামী ৫১ বছর ও তার পরবর্তী সময়ের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি।

ডেরেক শোলের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন ব্রিফিংয়ে বলেন, উনি এসেছেন আমাদের দুদেশের সম্পর্ককে আরও ভালো করার জন্য, শক্তিশালী করার জন্য। গত ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ক ভালো। কিন্তু এই সম্পর্ক আমরা আরও সামনে নিয়ে যেতে চাই, সলিডিফাই করতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় ইনভেস্টর। বাংলাদেশে নতুন গড়ে তোলা একশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানানোর কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের উপদেষ্টা ডেরেক শোলে।

তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা হিসাবে বাংলাদেশকে সহায়তার পাশাপাশি আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি এ সংকটের গোড়ার কারণ নিয়ে কাজ করতে, যা মিয়ানমারের ভেতরেই নিহিত। বুধবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সচিব (পশ্চিম) রাষ্ট্রদূত শাব্বির আহমদ চৌধুরী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, ইউএসএআইডি প্রশাসকের কাউন্সেলর ক্লিনটন হোয়াইট, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, দক্ষিণ মধ্য এশিয়া ব্যুরো এলিজাবেথ হর্স্ট এবং অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ ফর গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিস বেথ ভ্যান শ্যাক যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন।